Thursday, August 21, 2025

পদ স্থগিতেও থামেনি চাঁদাবাজি, কারাগারে বিএনপি নেতা

আরও পড়ুন

চাঁদবাজির অভিযোগে যশোরের নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির পদ স্থগিত হওয়া সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনিসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) যশোর আদালতে এ মামলা করেছেন নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ী মেহেদী হাসানের স্ত্রী রাবেয়া সুলতানা সুমি। পরে গ্রেফতার করে শুক্রবার (১৫ আগস্ট) তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জুবাইদা রওশন আরা অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতাকে (ওসি) অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার আদেশ দিয়েছেন

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- নওয়পাড়ার রমজান আলীর ছেলে সাকির আহমেদ, জয়নালের ছেলে কামরুজ্জামান মিঠু ও গোয়াখোলার খোকা মাস্টারের ছেলে সম্রাট।

মামলার সূত্রে জানা গেছে, নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ী মেহেদী হাসানের একটি জমি বিক্রির সংবাদ জানতে পারে আসামিরা। গত ৭ জুলাই জনি তার অফিসে মেহেদী হাসানকে ডেকে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ দিন মেহেদী হাসান ধার করে এক লাখ টাকা জনিকে দেন। এদিন মিঠু ফোন করে মেহেদী হাসানকে দেখা করতে বলেন জনির অফিসে। মেহেদী হাসান রাতে জনির অফিসে গিয়ে দেখেন আসামিরা বাদেও আরও অনেকে বসে আছেন। তাৎক্ষণিক জনি তাকে জানান, জমি বিক্রি করে ৩০ লাখ টাকা লাভ হয়েছে। এই টাকা চাঁদা হিসেবে তাকে দিতে হবে। এসময় মেহেদী হাসান কথা বলতে চাইলে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এরমধ্যে আসামিরা মেহেদীকে মারপিট ও খুন জখমের ভয় দেখিয়ে ১০০ টাকার তিনটি ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এরপর আসামি মিটু ও সম্রাট মোটরসাইকেলে মেহেদী হাসানকে বাড়ি নিয়ে এসে ৩০ লাখ টাকা চেক দাবি করেন। একপর্যায়ে আসামিদের ভয়ে তার স্ত্রী একটি ৫০ হাজার টাকার স্বাক্ষরিত চেক ও অপর দুটি টাকার অঙ্ক লেখা স্বাক্ষরবিহীন চেক দিয়ে দেন। আসামিরা ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। পরদিন স্বাক্ষরবিহীন চেকে স্বাক্ষর করে দেওয়ার জন্য আসামি চাপ প্রয়োগ করেন। চেকে স্বাক্ষর করে না দিলে নওয়াপাড়ায় এলে খুন করবে বলে হুমকি দেন।

আরও পড়ুনঃ  ভাই আসিফ মাহমুদ, ওয়েস্টিনে বিলটা কে দেয়—প্রশ্ন মাসুদ কামালের

চাঁপাইনবাবগঞ্জে তেলবাহী ট্রেনের ৫ বগি লাইনচ্যুত
এদিকে গুরুতর অবস্থায় মেহেদী হাসানকে প্রথমে যশোর পরে ঢাকায় নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে মেহেদী হাসানের পরিবারের সদস্যরা আসামিদের ভয়ে বাড়ি থাকতে পারছেন না বলে জানা গেছে। আসামিদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে গত বৃহস্পতিবার আদালতে মামলা করেন মেহেদী হাসানের স্ত্রী।

এ বিষয়ে অভয়নগর থানার ওসি আব্দুল আলিম জানান, আদালতে মামলার বিষয়টি শুনেছেন। তবে এখনও আদালত থেকে আছাদুজ্জামান জনির বিরুদ্ধে নতুন কোনো মামলার নথি তাদের কাছে আসেনি। আদালত যে নির্দেশনা দেবেন সে অনুযায়ী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আরও পড়ুনঃ  শিবির না করা শিক্ষার্থীদেরকেও ডাকসুর প্যানেলে রাখল শিবির

৪ কোটি টাকা চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনে হওয়া দুটি মামলায় গত শুক্রবার কারাগারে যান বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনি। এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে খুলনা শহরের রোজ গার্ডেন হোটেল থেকে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর জনিকে নিয়ে তার মালিকানাধীন নওয়াপাড়া ইকোপার্ক, বাসাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযানে চালায় যৌথবাহিনী। এসময় দেশীয় অস্ত্র চাপাতি, ছুরি, হাসুয়া, বিভিন্ন ব্যাংকের বই ও সিসি ক্যামেরার হার্ডডিক্স উদ্ধার করা হয়।
আসাদুজ্জামান জনি নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে দলীয় বিশৃঙ্খলা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর তার দলীয় পদ স্থগিত করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  সচিবালয় অভিমুখে ইশরাক সমর্থকদের লংমার্চ কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা

স্থানীয়রা জানান, দলীয় পদ স্থগিত থাকলেও নওয়াপাড়ায় দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ছিলেন আসাদুজ্জামান জনি। তার ভয়ে তটস্থ ছিল সবাই। শিল্প নগরী নৌ বন্দরের ব্যবসায়ীদের কাছে ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ